Friday, June 9, 2017

ফিনিক্সের ডানা





ডুডলিং করা আমার ছোটবেলার অভ্যাস। দেওয়াল থেকে শুরু করে, দরজা; হোমওয়ার্কের খাতা থেকে শুরু করে পড়ার বইয়ের কোনা-কাঞ্চিতে কলম পেন্সিল পেলেই হিজিবিজি আঁকিবুকি করা যার কোন আগামাথা নাই। স্কুল কলেজে থাকতে এজন্য আব্বুর ঝাড়িও কম খাই নাই। ইউনিভার্সিটিতে হয়তো বোরিং কোন লেকচার শুনছি, খাতার কোনায় হিজিবিজি চলছে। এখনো এই অভ্যাস আমার, যখন গ্রুপ মিটিং চলে চাইনিজ ভাষায়। 

আমার প্রফেসরের নাম “প্রফেসর প্যান”, ল্যাবের কিছু দুষ্ট পোলাপান  তাকে আড়ালে পিটার প্যান বলে ডাকাডাকি করে। আমরা সাবকন্টিনেন্টের পাব্লিকরা তাকে চাচা বা কাকু বলে ডাকি নিজেদের মদ্ধে। চাইনিজরাও বোঝে না। সাধারণত চাইনিজ ছাত্রদের উনি বিষদভাবে যে ইন্সট্রাকশন দিতে অন্তত ১০ মিনিট লাগান, বিদেশি ছাত্রদের বেলায় ইংরেজিতে উনি সেই ইন্সট্রাকশন দেন ২ লাইনে এবং এক মিনিটে। চাইনিজ ছাত্রদের  ওই ১০ মিনিটের "ইন্সট্রাকশন টাইম" পাস করতে আমার নোটবুকে আঁকিবুকি চলতে থাকে। ফুল-পাখি, হাতি, লতাপাতা, সময়টাও ভাল কাটে। মাঝে মাঝে নিজের প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাই।


বোরিং ইকোসিস্টেম ইকলোজি ক্লাসে করা ডুডলিং


এমিশন-এক্সাইটেশন স্পেকট্রসকপি বা জেটা-সাইজ যখন মাপি, একেকটা স্যাম্পল রান নিতে নিম্নে ১৫ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট সময় নেয়। এই লম্বা সময়টা আমি মোবাইলে গান শুনে, বই পড়ে বা অনেক সময় মুভি দেখে কাটিয়ে দেই। যখন রান শেষ হয়, পজ দিয়ে নতুন স্যাম্পল ইনজেক্ট করে আবার শুরু। মাঝে মাঝে সেই ডুডলিং চলে, চাইনিজরা আমার প্রতিভায় হা করে চেয়ে থাকে। আমি অবাক হয়ে ভাবি, এই হিজিবিজিতে মুগ্ধ হওয়ার কিছু নেইরে। ভাগ্যিস আব্বু নেই, নয়তো এগুলা দেখলে, আজও বলত, "সময় নষ্ট!"

সেদিন এই কাজ করতে গিয়ে খোদ প্যান কাকুর কাছে ধরা। আমি একমনে হিজিবিজি আঁকছি নোটবুকে, কাকু কখন যে পিছন থেকে উঁকি মেরে আছে আর দেখছে আমি টের পাইনি। উনার বাজে অভ্যাস এর একটা হল নি:শব্দে ঘাড়ের পিছন থেকে দাড়ায় উঁকি মেরে দেখবে কে কি করে।
“Wow! You have drawn that?”
হঠাৎ প্রশ্ন শুনে আমি থতমত, উত্তর কি দিব ভেবে পাচ্ছিনা। আমতা আমতা করি।
“What is that? It looks like a bird to me, more like a phoenix! A phoenix is flying, isn’t it?”
আমি কি বলবো বুঝে পাই না, খালি মাথা ঝাকাই……
“Nice nice! So how is your work going? I see you are working hard! Okay keep it up! By the way send me your report by tomorrow.” 
চলে গেল। বাবারে বাবা! যাক আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।


কাকুর চোখে এই সেই উড়ন্ত ফিনিক্স! 





No comments: