Saturday, June 10, 2017

চাইনিজ ফুড ফেস্টিভাল এক্সপিরিয়েন্স





১ মে চায়নাতে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ৩ দিনের ছুটি। বান্ধবি বল্ল উরুমচিতে দুইখানে নাকি ফুড ফেস্টিভাল হচ্ছে এ উপলক্ষে। যাবা নাকি? না করার কিছু নাই। দুনিয়াতে আছে ৩টা জিনিস- ১ খাও, ২ ওজন বাড়াও, আর ৩ ওয়েট মেশিনে উঠে চিল্লাও- আ আ আ........ ওজন বেড়ে গেছেএএএএএএএএ।  তো সেই খানাদানার উসিলাতেই গেলাম ফুড ফেস্টিভালে। পথপ্রদর্শক দুই চৈনিক বালিকা সমভ্যাবিহারে- শিয়ানশিয়ান এবং গুয়ান।

দুই ফেস্টিভালের ভেন্যু উরুমচির দুই মাথায়। প্রথম ভেন্যুতে গিয়ে পুরাই হতাশ- সবই চাইনিজ অখাদ্য-কুখাদ্য। ৫আরএমবির কাবাব ১০ আরএমবিতে বিক্রি করে। সাথের দুই চাইনিজ বালিকার এক বালিকা গুয়ান ২০ আরএমবিতে দুটা কাবাব কিনে খেতে শুরু করল। আরেক চাইনিজ বালিকা শিয়ানশিয়ান, প্রেসিডেন্ট শি জি পিং নাকি কোন পুর ভরা চাইনিজ ব্রেড খায় যাকে চাইনিজে বলে মানতোউ কিনে খেতে শুরু করল। এটা নাকি চায়নাতে খুব জনপ্রিয়- প্রেসিডেন্টের পছন্দের খানা বলে কথা! ফুড ফেস্টিভালে এসে কিছু না কিনে খাওয়াটা খারাপ দেখায়। তো আমিও একটা স্প্রিং পটেটো স্টিক কিনে নিলাম। বান্ধবিকে বল্লাম তুমি আর কিনে কি করবা। এটা থেকেই দুজন শেয়ার করি। বান্ধবির মনে হয় ব্যপারটা পছন্দ হয় নাই। সে আবার গিয়ে একখান স্প্রিং পটেটো স্টিক কিনে আনল। স্প্রিং পটেটো স্টিকে দুই কামড় বসাতেই মেলায় ঘুরা শেষ। দুই চৈনিক বালিকার চড়ম মন খারাপ, তারা ভাবছিল মেলায় নিশ্চয় অনেক বিদেশি খাবার দাবার থাকবে। আয়োজক অফিসে জিগেস করলে বলে, স্টল এই ১৫ টাই।


স্প্রিং পটেটো স্টিক

বের হয়ে জিগেস করল আমরা দ্বিতীয় ভেন্যুতে যেতে চাই কিনা। নো প্রবলেম চল। প্রায় দুই ঘন্টা বাসে ট্রাভেল করে মাঝপথে বাস চেনজ করে দ্বিতীয় ভেন্যু উরুমচির আরেক মাথায়। মেলায় নানা দেশের পতাকা দিয়ে সাজানো। বাংলাদেশের পতাকা দেখা তো অবাক আমি। দুই চৈনিক বালিকাকে দেখালাম। কন্সার্টের স্টেজও আছে। প্রচুর চেয়ার-টেবিল সাজানো। লোকজন জার্মান সসেজ, পাকা কলা, আনারসের পুর-ভরা তামিল পরোটা কিনে নিচ্ছে। চাইনিজ কাবাব তো আছেই। একটা স্টল পেলাম যেখানে জীবন্ত স্করপিয়ন কিলবিল করছে, ফ্রায়েড কিছু স্যাম্পলও রাখা কাঠিতে গেথে। মনে হইতেছিল এন্ড্রু জিমারম্যানের বিজার ফুড শো লাইভ দেখতেছি! সেল্স এসিস্টেন্ট ছেলে রাশান- জিগেস করলাম, "ডিড ইউ ইট?" ছেলে হাসতে হাসতে বলে, "নো"।
আমার পতাকা

ফ্রায়েড স্করপিয়নের বারবিকিউ, খেতে চান?

জ্যান্ত স্করপিয়ন 


চৈনিকদেশে মাসুদ ভাই ছাড়া অন্য বাংলাদেশির চেহারা দেখলাম বহুদিন পরে এই ভেন্যুতেই। এক আইসক্রিম এর স্টল- প্রথমে ভাবছিলাম নিশ্চয় পাকিস্তানি নয়তো ইন্ডিয়ান। বান্ধবি তাকে জিগেস করে, "আর ইউ ফ্রম পাকিস্তান?" বলে, "আই এম ফ্রম বাংলাদেশ"। বান্ধবি বলে, "আরে সি ইজ ফ্রম বাংলাদেশ!"
ছেলে  ভিষণ অবাক, আমিও। আবার জিগায়, "আর ইউ ফ্রম বাংলাদেশ?"
আমি বাংলায় বলতে  চাইলাম, "আরে বাংলায় কথা কস না কেন?" কিন্তু আমার নিজেকে অবাক করে মুখ দিয়ে ইংরেজি বের হয়ে গেল, "হোওয়াই আর ইউ নট স্পিকিং ইন বাংলা?"

ছেলে এবার বাংলায় উত্তর দিল, "চাইনিজ আর ইংরেজি বলতে বলতে বাংলা ভুলে যাচ্ছি"। সেপ্টেম্বরে সে চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপে শিনজিয়াং ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ করতে আসার পর এই প্রথম সে কোন বাংলাদেশির চেহারা দেখল আর বাংলা বল্ল সামনাসামনি। আমি নিজেও সামনাসামনি কোন বাংলাদেশির চেহারা দেখলাম প্রায় ৫-৬ মাস পরে। মাসুদ ভাইয়ের সাথেও আসলে আমার দেখা হয়না খুব একটা।ছেলে স্টলের সেল্স এসিস্টেন্টের জব নিয়েছে তিন দিনের জন্য। উইচ্যাট আদান-প্রদান করে বিদায় নিয়ে কনসার্ট শুনলাম কিছুক্ষণ, "নক নক নকিং অন হেভেন্স ডোর"-গায়িকা ভালই গাইলো। আমাদেরও বিদায় নেওয়ার পালা- ব্যাক টু উরুমচি।

She was covering metal version of Bob Dylan's knock knock knocking on heaven's door.

No comments: